রাতে ২০-২৫ জন সুন্দরী রমণীকে নিয়ে মাদকের জমজমাট আসর বসাতো মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা। জমজমাট এই সব আসরে আমন্ত্রণ জানানো হতো গুলশান, বনানী, বারিধারায় বসবাসকারী ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও তাদের সন্তানদের। এই সব রমণীদের পালাক্রমে আসরে বসিয়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হতো বিপুল পরিমাণ অর্থ।
রাতের এই রমণীকে গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত রোববার রাতে রাজধানীর বারিধারার বাসায় অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্যসহ আলোচিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাকে আটক করা হয়। এরপর গভীর রাতে মোহাম্মদপুরে একটি বাসা থেকে ইয়াবাসহ মডেল মৌ আক্তারকে আটক করে ডিবি। পিয়াসা ও মৌ একই সিন্ডিকেটে কাজ করে বলে জানা গেছে।
পিয়াসার ঘরের টেবিল থেকে চার প্যাকেট ইয়াবা (কত পিস জানা যায়নি), রান্নাঘরের ক্যাবিনেট থেকে ৯ বোতল বিদেশি মদ, ফ্রিজে একটি আইসক্রিমের বাক্স থেকে সিসা তৈরির কাঁচামাল এবং বেশ কয়েকটি ই-সিগারেট পাওয়া গেছে। এছাড়া পিয়াসার কাছ থেকে ৪টি স্মার্টফোন জব্দ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
আর মৌয়ের বাসার ভেতরে ড্রয়িং রুমের পাশেই একটি মিনি বার দেখা গেছে। বাসার ভেতরের বেডরুমের একটি ড্রয়ার থেকে পাঁচ প্যাকেট ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ওই বেডরুমের ভেতরে আরেকটি ড্রেসিং রুম থেকে অন্তত এক ডজন বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারের পর সোমবার তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে গুলশান ও মোহাম্মদপুরে পৃথক দুটি মামলা হয়। এরপর আদালতে উপস্থাপন করলে উভয়ের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরী রমণীদের দিয়ে মাদকের আসর বসিয়ে তিন ধরনের ফায়দা হাসিল করতেন পিয়াসা। আসরে আমন্ত্রিতদের বুঁদ করতে যে মাদক ব্যবহার করা হতো তার বিল পেত পিয়াসা।
এছাড়া রমণীরা উদাম নৃত্যের সময় তাদের ওপর যে টাকা ছিটানো হতো তার বড় অংশও পিয়াসা নিত। আর গোপন ক্যামেরায় আসরে আগন্তুকদের ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করত। এছাড়া রমণীদের সঙ্গে রাত কাটানো অতিথিদের পরদিন গুলশানের একটি ডায়মন্ড জুয়েলারি শপ থেকে লাখ লাখ টাকার জুয়েলারি উপহার দিতে বাধ্য করত। পরে ওই জুয়েলারি ফেরত দিয়ে নগদ টাকা নিয়ে নিত পিয়াসা।
তার সঙ্গে ওই ডায়মন্ড জুয়েলারি মালিকেরও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। আর পিয়াসার নেটওয়ার্কে থাকা সদস্যদের ইয়াবার চালান আসত টেকনাফ থেকে। অভিনব কায়দায় সংগ্রহ করা হতো ওই চালান। যা গোয়েন্দাদের কাছেও অনেকটা অজানা।
ডিবি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন-অর রশীদ বলেন, দুজন (দুই মডেল) একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অনেক অভিযোগ পেয়েছি। সেসব ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে তাদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। দুজনের বাসায় বিদেশি মদ, ইয়াবা ও সিসা পাওয়া গেছে। মৌয়ের বাড়িতে মদের বারও ছিল। তিনি বলেন, গ্রেফতার হওয়া দুই মডেল হলো রাতের রানি। তারা দিনের বেলায় ঘুমায় এবং রাতে অশ্লীল কর্মকাণ্ড করে।